বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
বরিশাল রিপোর্টঃ বরিশালে হত্যার বিচার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামক শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে।
বরিশালে পুলিশের লাঠির আঘাতে সাংবাদিকসহ ১০-১৫ জন আহত হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার পর সড়ক থেকে দুই ছাত্রীসহ ১১ জনকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নগরের সদর রোড ও ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকা জুড়ে এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর বরিশাল জেলার সমন্বায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ছিল। সেখানে এসে পুলিশ হামলা করেছে। নারী শিক্ষার্থীদের আহত করেছেন। আমি জানতে পেরেছি অর্ধশত শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। অন্তত ১০-১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যেভাবে গ্রেপ্তার চালিয়েছে, সেটাও ন্যক্কারজনক। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করে ডা. মনীষা পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকে পুলিশ বাহিনীই বরিশাল নগরের প্রধান সড়কগুলো আটকে রাখে। নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা দাবি আদায়ে সুশৃঙ্খলভাবে নগরের ফকিরবাড়ি রোড থেকে সদর রোডে উঠতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এরপরও বাধা উপেক্ষা করে তারা অশ্বিনী কুমার হলে সামনে চলে আসলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরে তারা আদালত পাড়ার সামনের সড়কে গেলে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয় এবং ১০-১১ জনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা কোনো ধরনের সংঘাতে ছিল না। তারপরও বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সহপাঠীদের ধরে নিয়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটার সামনেও অবরোধ করেছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের উঠিয়ে দিয়েছি। বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
উপ-পুলিশ কমিশনারের দাবি এখানে বেশ কিছু শিবিরের ছাত্র ছিল, যাদের আটক করেছে তারা। তবে এতে ভিন্নমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর বরিশাল জেলার আহ্বায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিল।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ী রোড থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনার ছবি ধারণ করতে যাওয়া দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার আলোকচিত্রি শামীম আহমেদ, হৃদয়, তুহিনসহ অন্তত ৬ সাংবাদিক পুলিশি লাঠিপেটার শিকার হন এবং আহত হন।
লাঠিপেটার শিকার সাংবাদিকরা জানান, বিনা উসকানিতে উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। এমনকি পরে গিয়ে আহত হওয়া সাংবাদিক শামীম আহমেদও বাদ যায়নি লাঠিপেটা থেকে। ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা এর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানালে, তারা ঘটনা অস্বীকার করেন। পরে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে তাৎক্ষণিক জানানো হয়। তিনি নিজে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানালে সাংবাদিকরা আহতদের নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য চলে যায়।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় ছাড়া পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বায়ক হুজাইফা রহমান জানান, ১ জন প্রতিবন্ধী পথচারীসহ পুলিশ ১১ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। ওই প্রতিবন্ধীসহ ৫ জনকে কিছুক্ষণ আগে ছেড়েছে। বাকি ৬ শিক্ষার্থী এখনও তাদের হেফাজতে রয়েছে।